
সরদার বাদশা নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম পারভেজ হত্যাকারী অবিলম্বে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমুলক শস্তির দাবি জানিয়ে খুলনা মহানগর ও জেলা ছাত্রদলের নেতৃবৃন্দ বলেছেন, ২০২৪ সালের গণআন্দোলনের মাধ্যমে আমরা রাজনীতিতে একটি ইতিবাচক পরিবর্তনের আশা করেছিলাম। কিন্তু পারভেজকে নির্মমভাবে হত্যা সেই আশাকে হতাশায় পরিণত করেছে। আমরা আর কোনো মায়ের কোল খালি হতে দিতে চাই না। পারভেজ হত্যার দ্রুত তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার না হলে ভবিষ্যতে আরও অস্থিরতা তৈরি হতে পারে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে এবং রাজনৈতিক ভিন্নমত দমনে সহিংসতার পথ পরিহার করতে হবে। মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) বিকাল সাড়ে ৪টায় নগরীর শিববাড়ি (জিয়াহল চত্ত্বরে) মোড়ে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতা জাহিদুল ইসলাম পারভেজকে নির্মমভাবে হত্যার প্রতিবাদ ও হত্যাকারী সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টন্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের দাবিতে এবং আওয়ামীলীগ ও তাদের দোরররা খুলনাসহ সারাদেশকে অস্থিতিশীল করতে বিভিন্ন স্থানে গুপ্ত মিছিল, হামলা ও প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার প্রতিবাদে খুলনা মহানগর ও জেলা ছাত্রদলের বিক্ষোভ মিছিল পুর্ব সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন। খুলনা মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সদস্য সচিব মো. তাজিম বিশ্বাসের সভাপতিত্বে এবং গোলাম মোস্তফা তুহিনের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তারা আরো বলেন, ৭১ এর পরাজিত শক্তি এবং ২৪ এর পরাজিত শক্তিরা মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধাবী ছাত্রনেতাকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রাঙ্গণে নির্মমভাবে হত্যার মধ্য দিয়ে ৫ আগস্ট পূর্ববর্তী সন্ত্রাসের রাজত্বকে পুনরায় ফিরিয়ে আনার অপচেষ্টা চলছে। আমাদের উদারতা, নমনীয়তা, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীলতাকে যদি কেউ সহজ সরলভাবে গ্রহণ করেন, তাহলে আপনারা ভুল ভাবছেন। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কোনও গুপ্ত সংগঠন না, গুপ্ত রাজনীতিতে বিশ্বাসী না। জাহিদুল ইসলাম পারভেজ ছাত্রদলের সক্রিয় কর্মী এবং সে গণঅভ্যুত্থানের নায়ক ছিল। তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। দেশনেতা তারেক রহমানের ভাষ্য অনুযায়ী আমরা ৩১ দফা পূরণের মাধ্যমে আমাদের প্রতিশোধ নেব। সাধারণ শিক্ষার্থীদের বেশে বাংলাদেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বৈষম্যবিরোধী ব্যানার এর মাধ্যমে ছাত্রলীগকে পুনর্বাসন প্রক্রিয়া চলছে। কেউ যদি এই ব্যানারকে ব্যবহার করে ছাত্রলীগের পুনর্বাসন করে তাদের বিরুদ্ধে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নেব। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল কিন্তু কঠোর অবস্থান নিতে ভুল করব না।
বক্তারা আরো বলেন দেশের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কুয়েটে দাবি দাওয়া বাস্তবায়ন নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নামে যে আন্দোলন চলছে, তার সাথে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোন সম্পর্ক নেই। কুয়েট মেধাবীদের প্রতিষ্ঠান। সেখানে গুটি কয়েক ছাত্র সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে বিশেষ মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছে। তাদের লক্ষ্য, দেশের নামি এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বিতর্কিত করা, মেধা শুন্য করা। কুয়েটে ৫ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী লেখাপড়া করে। অথচ মাত্র ৩০ থেকে ৩২জন ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয় আছে। এরা কোন ভাবেই ৫ হাজার শিক্ষার্থীদের পক্ষে প্রতিনিধি হতে পারে না। সাধারণ ছাত্রদের নামে একটি গোষ্ঠী চলমান আন্দোলনের নামে অহেতুক কুয়েটের মতো ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সুনাম নষ্ট করতে ও লেখাপড়া ব্যাহত করতে পরিকল্পিতভাবে বিশেষ এজেন্ডা নিয়ে মাঠে নেমেছে। তারা সেশনজট করতে চায়। পড়াশুনার সুষ্ঠু পরিবেশকে নষ্ট করতে চায়। ছাত্রদল সব সময়েই ছাত্র-শিক্ষার্থীদের পাশে আছে। আন্দোলনের নামে যে কোন নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি রোধ করতে ছাত্রদল বদ্ধ পরিকর। আন্দোলনের নামে বিভ্রান্ত না হতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন বক্তারা। একই সাথে ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে শক্ত ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য ইউজিসির প্রতি আহবান জানিয়েছেন ছাত্রনেতারা। সভায় খুলনা মহানগর ও জেলা ছাত্রদলের অন্তর্গত সকল থানা, কলেজ, পৌর, ওয়ার্ড, ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা অংশগ্রহন করেন। সমাবেশ শেষে শিববাড়ি মোড় থেকে একটি বিক্ষেঅভ মিছিল শুরু হয়ে রয়্যাল চত্ত্বরে গিয়ে শেষ হয়।
উল্লেখ্য, শনিবার (১৯ এপ্রিল) বিকেল ৪টার পর বনানীতে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ ও টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘাত শুরু হয়। ওই ঘটনার এক পর্যায়ে ছুরিকাঘাতে জাহিদুল ইসলাম পারভেজ নিহত হন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র।